একাহার, অথবা, একা আহারের নাতিসুক্ষ শিল্প
Volume 5 | Issue 4 [August 2025]

একাহার, অথবা, একা আহারের নাতিসুক্ষ শিল্প
হিয়া চ্যাটার্জি

Volume 5 | Issue 4 [August 2025]

কনভিভিয়ালিটি। উৎস: ল্যাটিন শব্দ কনভিভিয়ের, যার অর্থ একসঙ্গে থাকা এবং খাওয়া। শব্দটি এখন প্রয়োগ করা হয় বন্ধুভাব, উৎসব, এবং প্রীতিকর সামাজিকতা বোঝাতে। একাধিক মানুষের সান্নিধ্যে আহার, অথবা কোন আনন্দ উৎসবে আহারের সান্নিধ্যে একাধিক মানুষের জমায়েত (শ্রাদ্ধনুষ্ঠান কে নিশ্চয়ই কনভিভিয়াল বলা যায় না, যায় কি?) একা একা খাওয়ার যে অভ্যাস, দায় পড়ে অথবা স্বেচ্ছায়, সেটাকে তাহলে কি বলা হবে? ননভিভিয়ালিটি?

বাড়ি থেকে ১০০ কিলোমিটার-এরও বেশি দূরের কর্মক্ষেত্রের কাছে ভাড়া বাড়ি তে রাতের খাওয়াদাওয়া শেষ করতে করতে জীবনে কোন কোন জায়গায় এবং সময়ে একা বা একসাথে খেয়েছি, তাই চিন্তা করছিলাম। বড় হয়েছি যে পরিবারে, তাকে যৌথও বলা চলে না, আবার আণবিকও বলা চলে না। আমাদের খাওয়ার সময় ছিল মোটামুটি বাঁধা, এবং খাওয়া হত সবার সঙ্গে খাবার টেবিলে বসে। যেদিন বাবা মা থাকত না, অথচ আমার ছুটি থাকত, সেদিন আমার ঠাকু’মা বিশেষ করে নজর রাখত যাতে আমি একা না খাই, এবং যাতে শুধুই খাওযায় মন দিই: “ খেতে খেতে বই পড়ে না, লক্ষী সরস্বতীর ঝগড়া হয়”। কিন্তু আমি মোটেও তার কথা শুনতাম না, কারণ পরমুহূর্তেই নিজের এই নিষেধাজ্ঞার গুরুত্ব ভেঙে ফেলত এই বলে: “আমার বাবাও আমায় খুব বকত যখন আমি খেতে খেতে বই পড়তাম”। আমার বেশীরভাগ বইতে তেল বা হলুদের দাগ লেগে যেত, এমন কি কখনও সখনও শুকিযে যাওয়া খাবারের টুকরোও বহুদিন পরে সেই গল্পের মধ্যে থেকে আবিষ্কার করে ফেলতো কোন সরল পাঠক। পরে যখন ঠাকু’মার ঐ সতর্কবানীর তাৎপর্য বোঝার চেষ্টা করে মাকে জিজ্ঞেস করতাম যে আমি খেতে খেতে বই পড়লে দুই ঐশ্বরিক বোনেরা কেন কোন্দল করবে, আমার চিরকালের যুক্তিবাদী মা’র উত্তর ছিল: ও এমনি কথার কথা, আসল কারণ হল তুমি যদি খাবার দিকে মন না দাও, তোমার খাবার গলায় আটকে যাবে”। কিন্তু মা আমায় অন্তর্নিহিত অর্থটা বলেনি। বাঙালী দের একটা ধারণা আছে যে বিদ্যা আর যশ এক পথে আসেনা। লক্ষী হলেন ধনের দেবী, বৈষয়িক, বাস্তবিক, আর সরস্বতী হলেন জ্ঞানের দেবী, খামখেয়ালি বিদ্যাধরী। “লেখাপড়া করে যে, অনাহারে মরে সে”।

অনাহার ঠিক নয়, তবে একাহার তো বটেই। না না, একাহার বলতে সাধারণত যা বোঝায়, আমি ওই দিনে একবার আহার করার কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলছি না। ওসব তো সাধু সন্ন্যাসীরা, সাত্ত্বিক মানুষেরা করে থাকেন (অথবা যারা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করেন)। কিন্তু শব্দটাকে একটু মোচড় দিলে তার মানে তো এও দাঁড়াতে পারে: যে একা আহার করে। এই একা খাওয়া বা একার জন্য খাবার বলতেই একান্নবর্তি শব্দটার কথা মনে পড়ে যায়। যে পরিবারে সকল সদস্যের অন্ন একসাথে, এক হাঁড়িতে রাঁধা হয়, সেটাই একান্নবর্তী। অর্থাৎ অন্ন যদি ভিন্ন হেঁসেলে রান্না হয়, সেই পরিবারের সদস্যদেরও ‘ভেন্ন’ হওয়ার আশঙ্কা ঘনিয়ে আসে, সম্পত্তির ভাগ্ বাটোয়ারা হয়, যার বিবিধ দৃষ্টান্ত মেলে বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে।

স্কুলে অবশ্য দুপুরের খাওয়া ছিল উপলক্ষ মাত্র। ‘টিফিন টাইম’ হলেই বাড়ি থেকে আনা খাবার টা কোনরকমে গলাদ্ধকরণ করে ছুট্টে চলে যেতাম খেলার মাঠে। প্রতিদিন কোন না কোন চমক (প্রীতিকর বা অপ্রীতিকর)  অপেক্ষা করত সেই রঙিন প্লাস্টিকের বাক্সে: ম্যাগিকেক, ঠান্ডা রুটি তরকারি বা পাউরুটির হালুয়া (এক ঢিলে দুই পাখি মারার জন্য আমার মায়ের তৈরী বাসি সবজি আর পাউরুটির টুকরো দিয়ে বানানো জগাখিচুড়ি), আর নাহলে খোদার (নাকি ক্ষুধার?) মেহেরবানী তে যদি আগের দিনের বিশেষ কোন রান্না উৎসুক ভাবে সে বাক্স ঠুসে দেওয়া হত, তাহলে আর দেখতে হত না। ‘টিফিন টাইম’-এর অনেক আগেই সেই বহু প্রত্যাশিত টিফিন খেয়ে ফেলা হতো। আমি আবার এত আস্তে আস্তে খেতাম যে ঐ নির্দিষ্ট আধ ঘন্টাতেও খাওয়া শেষ করতে পারতাম না, আমার এক টিচার তাই বলতেন দো-তলা টিফিন বাক্স আনা বন্ধ কর। ইঁদুরের মতো পেটে খিদে দৌড়োত, টিফিন টাইমের আগেই পেট চুঁইচুঁই, ক্লাসের পড়ার মধ্যেই টেবিলের তলায় হস্তপরিবর্তন করত টিফিন বাক্স, গলায় আটকে যাওয়ার জোগাড় হত শিক্ষিকার নজর এড়িয়ে খাবার গিলতে গিয়ে। আবার কখনো জোর করে নাপসন্দ টিফিন গলা দিয়ে নামাতে হত যাতে বাড়িতে বকুনি না দেয়, (আমরা সব অকৃতজ্ঞ বিচ্ছুরা নিশ্চয়ই কখনো না কখনো টিফিন ফেলে দেওয়ার অপরাধে অপরাধী)  আর তারপর দৌড়ে পৌঁছে যাওয়া হত রোদ ঝলসানো দুপুরে ঘেমে নেয়ে মাঠে খোখো বা কাবাড্ডি বা লক এন্ড কী খেলতে।  আমার সৃজনশীল ছোট বোন এরকম অপছন্দের খাবার গুলো বাড়িতে যেখানে সেখানে লুকিয়ে রাখতো। এক বাটি ছাতা পড়া, শুকনো ম্যাগি বেরোতো বই এর আলমারির মধ্যে থেকে, হয়তো খেতে খেতে বোর হয়ে গিয়ে রেখে দিয়েছে, বা সোফার গদির তলায় গুঁজে রাখা রুটির টুকরো, যা আমাদের পোষা কুকুর শুঁকে বার করেছিল। কিন্তু যাই হয়ে যাক, স্কুলে একা আহার করার কোন উপায় ছিল না। একজন ভালো খাবার আনলে সবাই তা খেতে পেতো —– যতক্ষণ সবাই ফ্রায়েডরাইসচিলিচিকেনের অল্প ভাগ পেতো, সেই খাবারের মালিক যদি অভুক্তও থাকত,তাতে ভারী বয়েই যেত।

আমার মাস্টার্সের অভিজ্ঞতা আবার অন্যরকম। হোস্টেলে থাকা আর খাওয়ার অভিজ্ঞতা কনভিভিয়াল হওয়ারই কথা, কিন্তু আহার বা আবহাওয়া কোনোটাই খুব একটা আনন্দ বা উৎসবের উদ্রেক করত না। হোস্টেলের খাবার ছিল নেহাতই পানসে, কিন্তু যেদিন কাড়ি চাওয়াল হত বা ফ্রায়েড রাইস আর চিলি পনির হত, সেদিনগুলোর জন্য মুখিয়ে থাকতাম। আমার বোনেরা হোস্টেলের বিস্বাদ খাবার খেয়ে ক্লান্ত হয়ে গিয়ে নানারকম টক ঝাল আচার দিয়ে খাওয়া এক্সপেরিমেন্ট করত। ও-ই আমায় তিতোড়া বলে একটা ঝাল মশলাদার শুকনো নেপালী আচার এর কথা প্রথম বার বলেছিল। সেই তিতোড়া হাল্কা আগুনে মেশানো ছোটবেলার দিনগুলোর মত, এমন দাঁত টকে যাওয়া, এক চোখ বন্ধ হয়ে যাওয়া স্বাদ তার।

যে মেসে আমাদের হোস্টেলের খাওয়াদাওয়া হত, সেগুলো বিশাল বড়ো ডাইনিং হল, গমগম করতে হোস্টেলবাসীদের আওয়াজে, কিন্তু সেখানে অচেনা লোকজনের সঙ্গে এক টেবিলে বসে আমার কিছু বন্ধুদের খেতে খুব অসুবিধা হত। আমি অবশ্য বুঝতে পারতাম না কেন অন্যরা, বিশেষত ছেলেরা, চেয়ে থাকলে তাদের অস্বস্তি হত, এ ব্যাপারে আমি তখন একটু উদাসীন ছিলাম হয়তো। ওরা খাবার টা ঘরে নিয়ে গিয়ে ফোল্ডেবল টেবিলের ওপর রেখে খেত। আমি তাদের ‘অতিস্পর্শকাতরতা’ নিয়ে খ্যাপাতাম, আর বলতাম এই হল ‘পুরুষ দৃষ্টির অভ্যন্তরীকরণ’। এখন পেছন ফিরে তাকিয়ে যখন ওদের ইতস্তত বোধের কথা ভাবি, তখন মনেহয় যে অনেক ক্ষেত্রে কনভিভিয়ালিটিও চাপিয়ে দেওয়া হয়। যে সমাজ তোমায় সবকিছু একসাথে করতে বাধ্য করে, কিন্তু নিজের মত কিছু করতে গেলেই দূরে সরিয়ে দেয়, সেই  সমাজে কনভিভিয়াল হতে বাধ্য করা খুবই কষ্টকর, বিশেষত যে অসম টেবিলে পুরুষেরা শুধু তাকিয়ে দেখে, ফর্মাইশ করে বা সমালোচনা করে, আর মেয়েরা খাবার পরিবেশন করে। আমি জে এন ইউ তে সবসময় নিজেকে সুরক্ষিত মনে করেছি বলে আমার বান্ধবীদের মেসে খেতে যাওয়ায় আপত্তিটা বুঝতাম না তখন, যদিও আমার বন্ধু বলেছিল, ‘দৃষ্টি টা বাস্তব’। অচেনা ছেলেদের অকারণ আলাপচারিতা সহ্য করার চাইতে নিজের ঘরে বসে খেতে খেতে ল্যাপটপে ফ্রেন্ডস দেখা অনেক শান্তির। ননভিভিয়ালিটি-রও অনেক সুবিধে রয়েছে।

আমার অবশ্য এই রাতের খাবার শেষ করে একটা ওয়েব সিরিজ মাঝপথে থামিয়ে সব গোছানোর সময় তা মনে হয়না। পড়তে পড়তে খাওয়ার পরিবর্তে এখন দেখতে দেখতে খাওয়ার যুগ এসেছে। সহজপাচ্য উপাদান দিয়ে তৈরী বেশিরভাগ সিরিজ যেভাবে এড্রেনালিন কে জাগিয়ে তোলে, তা বইয়ের সাধ্য নয়, কারণ প্রথমটা বইয়ের মতো অত মনোযোগ দাবি করেনা। সারাদিন পর ডিনার বানাতেই আমার বেশিরভাগ এনার্জি শেষ, যেটুকু বাকি আছে তা নেটফ্লিক্সের কোনো একটি থ্রিলার কে সমর্পন করি। একজনের জন্য রান্না করাও একটা শিল্প। বেশি হবে না কম হবে, বেশিরভাগ সময় যদিও বেশিই হয়। আর সেই অস্তিত্ববাদী প্রশ্ন: কি রান্না হবে? যার উত্তরেই প্রায়ই ওই একান্নবর্তী, অর্থাৎ এক ‘বর্তনে’ অন্ন, সবজি বা ডিম বা চিকেন দিয়ে একটা খিচুড়ি। আর অবশ্যই, জিভের স্বাদ কোরক গুলোকে আস্থা প্রদানের জন্য আচার। একাহার এবং একাচার। দুরকমের আচার খেলে কি তবে দ্বিচারিতা হবে?

মুরাকামির 1Q84 উপন্যাসটিতে মূল চরিত্র তেঙ্গো একা থাকে আর একা খায়। গল্পে একা রান্না করা আর খাওয়ার পদ্ধতি এত শান্ত ও গোছালো ভাবে বর্ণনা করা আছে, যে রান্না করার আর খাওয়ার পর আমার প্রলোয়ত্তর রান্নাঘর আর হলুদের দাগ লাগা ফোল্ডেবল টেবিল দেখে মনে প্রশ্ন জাগে। রান্না করার সময় তেঙ্গোর মানসিক প্রশান্তি নিয়ে রাঁধতে খুব ইচ্ছে করে, কিন্তু ভেবে দেখি যে আমি কোনদিনই নিজের জন্য শান্ত ভাবে রাঁধিনি। আমাদের রান্নায় মশলার, বিশেষত হলুদের, প্রাধান্য থাকায় খাবার একবার কোথাও লেগে গেলে তা বহুদিনের জন্য যাহাকেই স্পর্শ করে তাহাতেই দাগ কেটে যায়। এই একক রন্ধন প্রক্রিয়া আমার অবশ্যই ভাল লাগত যদি আমার একটি সুসজ্জিত, পরিপূর্ণ  রান্নাঘর থাকত, যেটি এই এক কামরার ভাড়ার ফ্ল্যাটে বিলাসিতাই বটে। সপ্তাহান্তে বাড়ি ফিরে কলকাতার ফ্ল্যাটে রান্না করতে আমার দিব্যি লাগে। অনেক ফিল্মে আমি দেখেছি মহিলারা বেশ ওয়াইন খেতে খেতে, গান শুনতে শুনতে, নাচতে নাচতে রান্না করে। আমি একদিন তা করতে গিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে পেঁয়াজ টেয়াজ সব পুড়িয়ে ফেললাম। তা ছাড়া আছে অন্যদের জন্য রান্না করার সময় উদ্বেগ। বীভৎস গরমে নিজের জন্য রান্না করতে গিয়ে অধৈর্য হয়ে, বিরক্ত হয়ে হতাশ হয়ে পড়ি; আর অন্যের জন্য রাঁধতে গিয়ে জাগে উৎকন্ঠা। তখন মনে হয় সত্যিই কি রাঁধতে ভালবাসি নাকি রন্ধন শিল্পের দ্বারা মুগ্ধ্ হয়ে রাঁধতে ভালবাসার ভান করি। একা খাওয়ার মত একা রাঁধার সঙ্গেও আমার সম্পর্ক টা জটিল, ঈষৎ তেতো, ঈষৎ মিষ্টি।

কবে যে একা খাওয়াটাকে রোম্যান্টিসাইজ করা শুরু করেছিলাম সেটা মনে পড়েনা। হয়ত যখন শহরে দু জায়গায় কাজে যাওয়ার মাঝখানে একটু সময় করে সকালের ক্লাসের পর প্রাতঃরাশ বা দুপুরের কাজ শেষ করে কাছাকাছি কোথাও খেতে যেতাম। আমার সামাজিক অবস্থান নিয়ে তখনও গভীরভাবে সচেতন ছিলাম। আমি কোনদিনও অফিস্ পাড়ার অফিস যাত্রীদের মত বা শ্রমিকদের মত ভাতের হোটেলে একা খাইনি, এবং মহিলাদেরও একা বসে খেতে দেখিনি, যদিও অনেক পুরুষ এসে একাই কেজো ভাবে খেয়েদেয়ে চলে যেত। আমার বরও যখন কাজে যেতে লাগল তখন প্রায়ই  এইসব ভোজনালয়ে দিব্যি চল্লিশ টাকার মধ্যে চাটনি মিষ্টি সমেত পেট ভরে খাওয়া সারত। আমার কোন বান্ধবী্ই কিন্তু এরকম জায়গায় খাবার কথা  বলেনি। তারা হয় অফিস ক্যান্টিনে আর নয় একটু দামী রেস্তোরাঁয় খেত। বুঝতে পারি, যে একা খেতে পারাটাও শ্রেণী-নির্দিষ্ট, আর খাওয়ার জায়গাগুলোও শ্রেণীবদ্ধ,  আমি যতই নিজের একা একা খাওয়াকে বিপ্লবী আচরণ ভেবে ফেলি না কেন। একদিকে আমার মনে পড়ে মার্গারিটা উইথ স্ট্র ছবির শেষ দৃশ্য, যেখানে প্রধান চরিত্র একা একা আয়নার সামনে বসে খায় আর নিজের দিকে তাকিয়ে হাসে, নিজের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করে; আর অন্যদিকে মনে পড়ে মঞ্জু পিসির কথা, আমাদের গৃহকর্মীনি যিনি আমাদের খাওয়া শেষে সব পরিষ্কার করে নিজে মাটিতে এক কোণায় বসে অন্ধকারে খেতেন। তিনি সেই জায়গায় সুরক্ষিত বোধ করতেন কিনা কে জানে।

প্রত্যেকেরই খাওয়ার সাথে অন্তত একটা জটিল সম্পর্ক আছে। দ্য অ্যাটলান্টিক পত্রিকায় একটি প্রবন্ধে লেখিকা দুঃখের খাবার (স্যাড ফুড) এবং একাকীত্বের খাবারের (সলিট্যুড ফুড) মধ্যে তফাত করেছেন। প্রথমটা হল যখন মানুষ বিষন্ন হয়ে, মানসিক ভাবে হতাশ হয়ে, অনিচ্ছায় একাকী আহার করে, আর দ্বিতীয়টা হল যখন সে স্বেচ্ছায়, সানন্দে, নিজ সঙ্গ উপভোগ করতে করতে আহার করে। বাসন গুলো ধুয়ে তুলতে তুলতে ভাবি, আমার সবজি আর চিকেন দিয়ে দালিয়ার খিচুড়ি আর কুলের আচার সলিট্যুড ফুড হওয়ার মত ‘কূল’ কিনা। আর কিছু না হলেও সোজা খাবার; আমি সহজপাকের সাথে সহজ পাঠ করি, আর সহজিয়া কীর্তনের মত সহজিয়া ভোজনে রত হই। আর তারপর নিজেকেই জিজ্ঞেস করি, যে কোনরকমে নিজের জন্য খিচুড়ি রান্না করে, কোনরকমে জিভে জল আনা থ্রিলার দেখতে একলা রাতে খিদে মেটানোর জন্য  খায়, তাকে কি আদৌ রাঁধুনী বলা চলে? যতক্ষন না কোন পরিপাটি ক্যাফে তে বা রেস্তোরাঁয় বসে, ল্যাপটপে কাজ করতে করতে বা বই পড়তে পড়তে, অথবা অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করতে করতে খাই, আমার নিজের সঙ্গ আমার কাছে যথেষ্ট নয়। একাকীত্ব ভুলে থাকার জন্য কোন বাহ্যিক উদ্দীপকের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আমি কি তবে সত্যিই কখনও একাহারী ছিলাম?

*ছবি – হিয়া চ্যাটার্জী

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

oneating-border
Scroll to Top
  • The views expressed through this site are those of the individual authors writing in their individual capacities only and not those of the owners and/or editors of this website. All liability with respect to actions taken or not taken based on the contents of this site are hereby expressly disclaimed. The content on this posting is provided “as is”; no representations are made that the content is error-free.

    The visitor/reader/contributor of this website acknowledges and agrees that when he/she reads or posts content on this website or views content provided by others, they are doing so at their own discretion and risk, including any reliance on the accuracy or completeness of that content. The visitor/contributor further acknowledges and agrees that the views expressed by them in their content do not necessarily reflect the views of oneating.in, and we do not support or endorse any user content. The visitor/contributor acknowledges that oneating.in has no obligation to pre-screen, monitor, review, or edit any content posted by the visitor/contributor and other users of this Site.

    No content/artwork/image used in this site may be reproduced in any form without obtaining explicit prior permission from the owners of oneating.in.